Tanguar Haor
টাঙ্গুয়ার হাওর ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বাংলাদেশের এক বিশাল শীতল জলাভূমির নাম। নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত এই টাঙ্গুয়ার হাওর। এই হাওড় বাংলাদেশের অন্যতম মিঠাপানির জলাভূমি যা আন্তর্জাতিকভাবেও বহুল সমাদৃত। বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় এই হাওরের অবস্থান। প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। এই হাওরে প্রায় ৪৬টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় হাওরের সব কিছু ডুবে যাওয়ায় এই গ্রাম গুলোকে তখন দ্বীপ গ্রাম বলেই মনে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে ২৮০২.৩৬ হেক্টর এলাকা জলাভূমি। হাওর থেকে যে দৃষ্টি নন্দন পাহাড়গুলো দেখা যায় সেগুলোর অবস্থান ভারতের মেঘালয়ে। সেখান থেকেই নেমে আসা ছোট বড় প্রায় ৩০ ঝর্ণা এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওর ( Tanguar Haor ) মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদের এক বিশাল অভয়াশ্রম। ১৯৯৯ সালে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার টাঙ্গুয়ার হাওরকে ECA (Ecologically critical Area) হিসেবে ঘোষনা করে এবং ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি টাঙ্গুয়ার হাওরকে ২য় ‘রামসার স্থান’ (Ramsar site) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ হাওর দেশী মাছের আধার, এ হাওর দেশের একটি মাদার ফিশারী। টাঙ্গুয়ায় হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই এখানে আসতে হবে।
প্রকৃতির আপন খেয়ালেই বেড়ে উঠেছে বিশাল এই জলাভূমি। প্রতিটি মৌসুমেই হাওর তার রুপের পরিবর্তন করে। টাঙ্গুয়ার হাওর দেখবেন কখনো আয়নার মত স্বচ্ছ আবার দেখবেন আকাশের মত নীল। নীল আকাশের সাদা মেঘের খেলা দেখবেন স্বচ্ছ জলের মাঝে। যান্ত্রীকতায় মোড়ানো শহুরে জীবনকে দুই তিনদিনের জন্য বিদায় জানিয়ে চলে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওরে। কথা দিচ্ছি নৌকায় থাকার দিনগুলো আপনার জীবনে স্বরনীয় হয়ে থাকবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের দুইদিনের এই নৌকা ভ্রমণই আলাদা দেশের অন্যান্য জায়গার ভ্রমণ থেকে। নৌকার উপরে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করতে পারবেন মেঘালয়ের পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য। ভোজন রসিকদের জন্য হাওর ভ্রমণ খুবই পছন্দের। হাওরের নানান জাতের তাজা মাছ আর হাঁস দিয়ে হয় প্রতিবেলার উদরপূর্তি। নৌকার ছাদে বসে খাবেন আর উপভোগ করবেন হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য।
টাঙ্গুয়ার হাওরে কখন আসবেন
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সব চাইতে উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। ভারতের মেঘালয় থেকে বয়ে আসা পানিতে হাওর কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। তখন হাওরের বিশালতা আপনাকে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করবে। মনে হবে কোন এক সাগরে এসে পড়েছেন আপনি। বর্ষা ছাড়াও শীতে চলে আসতে পারেন হাওর ভ্রমণে দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠ। যতদূর চোখ যাবে শুধু সবুজ আর সবুজ। হাওরের মাঝ দিয়ে সাপের মত এঁকে বেঁকে চলা নদী, এবং সূদুর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখি আপনাকে বিমোহিত করবে। শীতে শিমুল ফুল ফোটে বলে হাওরের শিমুল বাগান তখন রক্তিম আভা ধারণ করে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে কিভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ হয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওর আসতে হলে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে সুনামগঞ্জ শহরে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন শ্যামলী এন আর, শ্যামলী এস পি, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, মামুন পরিবহনের নন এসি বাসগুলো সুনামগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে আসে। এই রুটে নন এসি বাস ভাড়া ৮০০ টাকা। মহাখালী, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আসে এনা পরিবহন। এনা পরিবহনের এসি বাস এবং নন এসি বাস দুইই আছে। এই রুটের নন এসি বাসে ভাড়া ৮০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০ টাকা। সুনামগঞ্জ শহর থেকে লেগুনা, সি এন জি অথবা বাইকে করে চলে আসুন তাহিরপুর বাজার, এই বাজারের ঘাট থেকেই হাওর ভ্রমণের জন্য ইঞ্জিন চালিত বোট পেয়ে যাবেন। তবে আমাদের হাউজ বোট বাতান -এ বুকিং থাকলে আপনাকে কষ্ট করে তাহিরপুরে আসতে হবে না। আপনি সুনামগঞ্জ সদরের সাহেব বাড়ি ঘাট থেকেই আমাদের প্রিমিয়াম হাউজ বোট বাতান -এ উঠতে পারবেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের মধ্যনগর হয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর
দেশের যেকোন স্থান হতে প্রথমে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চলে আসুন। ঢাকার কমলাপুর রেল ষ্টেশন থেকে প্রতিদিন রাত ১১টায় হাওর এক্সপ্রেস ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে। সবকিছু ঠিক থাকলে ভোর ছয়টায় মোহনগঞ্জ ষ্টেসনে নেমে যেতে পারবেন। মোহনগঞ্জ থেকে বাইকে / সি এন জি তে করে চলে আসুন মধ্যনগর বাজার লঞ্চ ঘাটে। এখান থেকে স্পিড বোটে সরাসরি তাহিরপুর চলে আসুন। তাহিরপুর থেকে হাওর ভ্রমণের জন্য ইঞ্জিন চালিত বোট পেয়ে যাবেন। তবে আমাদের প্রিমিয়াম হাউজ বোট বাতান -এ পুরোটাই বুকিং করলে, আপনারা মধ্যনগর বাজার লঞ্চ ঘাট থেকেই আমাদের হাউজ হাউজ বোটে হাওর ভ্রমণ শুরু করতে পারবেন।
ট্রেনে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ
সরাসরি ট্রেনে করে সুনামগঞ্জ আসার কোন উপায় নেই তবে সিলেট পর্যন্ত ট্রেনে এসে বাকি পথটুকু বাসে কিংবা সি এন জি অথবা প্রাইভেট কারে করে চলে আসতে পারবেন। সিলেট রেল ষ্টেশন থেকে অটো বা রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন হুমায়ন চত্বর সেখান থেকেই সুনামগঞ্জের বাস পেয়ে যাবেন। এসি বাসে নিবে ২০০টাকা আর নন এসি বিরতিহীন ১৪৫টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা বা সি এন জি যোগে তাহিরপুর সেখান থেকে নৌকায় উঠতে পারবেন। অথবা চাইলে সুনামগঞ্জ থেকেও আপনি নৌকায় উঠতে পারবেন। বেশিরভাগ হাউজ বোট সুনামগঞ্জ থেকেই ছাড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওরের বেষ্ট হাউজ বোট “বাতান” ও ছাড়ে সুনামগঞ্জ সাহেব বাড়ির ঘাট থেকে।
বিমানে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ
সুনামগঞ্জে কোন বিমান বন্দর নেই, সরাসরি বিমানে করে সুনগঞ্জে আসার কোন সুযোগ নেই। তাই যারা বিমানে আসতে চান তারা প্রথমে চলে আসুন সিলেটে সেখান থেকে বাসে, সি এন জি অথবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে চলে আসতে পারেন সুনামগঞ্জ শহরে। চাইলে সুনামগঞ্জ থেকেই বিলাস বিহুল হাউজ বোটে হাওর ভ্রমণ শুরু করতে পারেন। অথবা তাহিরপুর বাজার যেতে হবে তারপর আপনার হাওর ভ্রমণ শুরু করতে পারবেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরের দর্শনীয় স্থান সমূহ
ট্যাকের হাট
ট্যাকের হাট ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি বাজার। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যারা আসেন তারা একবার হলে বেড়িয়ে যান ট্যাকের হাটে। ট্যাকের ঘাটে নৌকা নোঙ্গর করার পর বিকেলের সময়টা সবাই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলায় হালকা খাবার বা ভাজা পোড়া খেতে সবাই ভিড় জমায় ট্যাকের হাটে। ট্যাকের ঘাট থেকে ০৩-০৪ মিনিটের হাটার দুরুত্বে এই বাজারের অবস্থান। যারা বাজেট ট্যুরে আসেন তারা ট্যাকের হাটে কম দামে ভালো মানের খাবার পেয়ে যাবেন।
লাকমা ছড়া
টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে আসলে যে জায়গাটিতে যেতে একদম ভূলবেন না সেটি হচ্ছে লাকমা ছড়া। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের আস্তরন। এই সবুজ আস্তরনের বুক বেয়ে নেমে এসেছে এক ঝর্ণা, যার নাম লাকমা। এই ঝর্নাটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে। লাকমা ঝর্ণাটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়না। লাকমা ঝর্ণার পানিগুলো বাংলাদেশে বয়ে আসে। লাকমা ঝর্ণার পানি গিয়ে পড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে। যে পথ দিয়ে পানি গিয়ে হাওরে পড়ে তাকে বলে লাকমা ছড়া। ছড়ার শীতল জল আপনাকে প্রনবন্ত করবে। ছড়ায় বড় বড় পাথর ছড়ার সৌন্দর্যকে কয়েক গুন বৃদ্ধি করেছে। ট্যাকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে একটা অটো বা মোটর সাইকেল নিয়ে লাকমা ছড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যেতে পারেন।
ওয়াচ টাওয়ার
হাওরকে অন্যভাবে উপভোগ করতে অবশ্যই উঠবেন ওয়াচ টাওয়ারে। ছুটির দিন গুলোতে বেশ ভিড় থাকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে। বলাই নদীর পাশ ঘেঁসে হিজল বনে ওয়াচ টাওয়ারের অবস্থান। প্রায় সব নৌকা একবারের জন্য হলেও ওয়াচ টাওয়ারের পাশে যায়। ওয়াচ টাওয়ারের আশে পাশের পানি বেশ স্বচ্ছ। পানি স্বচ্ছ বলে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই এইখানে গোসল সেরে নেন। এইখানে পানিতে নেমে চা খাওয়ার আছে বিশেষ সুযোগ। ছোট ছোট নৌকায় করে হাওরের স্থানীয় লোকজন চা, বিস্কুট বিক্রয় করে। আপনি চাইলে বড় নৌকা থেকে নেমে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরতে পারবেন এইখানে, শুনতে পারবেন মাঝির সুমধুর কন্ঠে হাওর বাঁচানোর গান।
নীলাদ্রি লেক
নীলাদ্রি লেক এইখানে মানুষদের কাছে পাথর কুয়ারি নামে পরিচিত। এই লেকটি এবং তার আশ পাশের এলাকা বাংলার কাশ্মীর নামেও পরিচিত। নীলাদ্রি লেকের বর্তমান নাম “শহীদ সিরাজী লেক” । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ গেরিলা যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বির বিক্রম এর নামানুসারে এই লেকের নামকরন করা হয়। কিন্তু ট্রাভেলার কমিউনিটিতে এটি নীলাদ্রি লেক হিসেবেই বেশী পরিচিত। এই লেকের পানি খুব স্বচ্ছ। নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এই লেকে। আরো আছে কায়াকিং এর বিশেষ ব্যাবস্থা। ক্লান্তি দূর করার জন্য স্বচ্ছ ঠান্ডা লেকের জলে স্নান করে নিতে পারবেন। লেকের এক পাশ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো ছোট ছোট বেশ কয়েকটি টিলা। আর অন্য পাশে রয়েছে সুউচ্চ সুবিশাল পাহাড়। পাহাড়, টিলা, লেকের স্বচ্ছ পানি প্রকৃতির এই সুন্দর মিতালী আপনাকে বিমোহিত করবে। এইখানে এসে আপনি হারিয়ে যেতে বাধ্য। ট্যাঁকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে সোজা হেঁটে চলে আসতে পারবেন নীলাদ্রি লেকে। পড়ন্ত বিকালের সময়টুকু কাটতে পারেন লেকের পাড়ের ঘাসের চাদরে বসে। অথবা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে করতে পারেন লেকের জলে নৌকা ভ্রমণ অথবা করতে পারেন কায়াকিং।
জাদুকাটা নদী
জাদুকাটা নদীর আদি নাম রেনুকা। কথিত আছে জাদুকাটা নদী পাড়ে বসবাস কারি কোন এক বধু তার পুত্র সন্তান জাদুকে কোলে নিয়ে নদীর অনেক বড় একটি মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে নিজের সন্তান জাদুকেই কেটে ফেলেন। এই কাহিনী থেকেই পরবর্তীকালে এই নদীর নাম হয় জাদুকাটা নদী। এ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের জৈন্তিয়া পাহাড়। এ নদীর পানি অনেক ঠান্ডা, দুপুরের গেলে নঈতে ডূব দিতে একদম ভূলবেন না। তবে নদীর মাঝে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মাঝে অনেক স্রোত থাকে। জাদুকাটার এক পাশে সুবিশাল পাহাড় উপরে নীল আকাশ আর নদীর স্বচ্ছ পানি এইগুলো মিলে অদ্ভূত এক ক্যানভাসের সৃষ্টি করে।
শিমুল বাগান
এটি বাংলাদেশের সব চাইতে বড় শিমুলা বাগান। এ বাগানে প্রায় ৩০০০ শিমুল গাছ রয়েছে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুরে এই শিমুল বাগানের বিস্তৃতি। বসন্ত কালে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা আপনার মনকে রাঙ্গিয়ে দিবে। শিমুল বাগানের অপর পাশে মেঘালয়ের সুবিশাল পাহাড় মাঝে সচ্ছ নীল জলের নদী জাদু কাটা আর এই পাশে রক্তিম শিমুল ফুলের আভা আপনার মন নেচে উঠবে। শিমুল বাগানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। শিমুল বাগানের নিচেই নৌকা আসে। নৌকা না আসলে ট্যাকের ঘাট থেকে বাইক নিয়ে ঘুরে যেতে পারবেন শিমুল বাগান।
বারিক্কা টিলা
মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তের এই পাশে সবুজে মোড়ানো এক টিলার নাম বারেকের টিলা বা বারিক্কা টিলা। উঁচু এই টিলার একপাশে ভারতের সুউচু পাহাড়, অন্য পাশে স্বচ্ছ জলের নদী জাদুকাটা। বারিক্কা টিলা থেকেই দেখতে পারবেন মেঘ পাহাড়ের মিলবন্ধন। বারিক্কা টিলার উপর থেকে জাদুকাটা নদীর দিকে তাকালে আপনি যে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পারবেন তার রেশ থেকে যাবে বহুদিন। বারিকা টিলার পাশে দুইটি মিষ্টি পানির ছড়া রয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া এই ছরাগুলো পানি থাকে না বললেই চলে। ছড়া গুলো দেখতে খানিকটা ট্র্যাকিং করতে হবে। এছাড়াও ভারতের পাহাড়ে রয়েছে শাহ্ আরেফিনের মাজার এবং রয়েছে একটি তীর্থ স্থান। বছরের নির্দৃষ্ট দিনে এইখানে ওরস এবং পূণ্য স্নানের আয়োজন হয়। বারিক্কা টিলার পাশেই জাদুকাটা নদী। এ নদী দিয়েই নৌকায় করে আসতে পারবেন। কিন্ত নৌকা না আসলে ট্যাকের ঘাট থেকে বাইক বা ইজি বাইক চলে আসতে পারবেন বারিক্কা টিলায়।
হিজল বন
টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল বনটি দেশের সবচাইতে পুরানো হিজল বন। বলাই নদীর পাশেই আছে এই হিজল বন। হাওরের মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এই হিজল বন। টাঙ্গুয়ার হাওরে আছে শতবর্ষীয় হিজল গাছ। বর্ষায় গলা সমান পানিতে ডুবে থাকা গাছে গাছে ঝুলে থাকা হিজল ফুলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এছাড়াও রয়েছে
হাসন রাজার যাদুঘর
সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর ঠিক পাশেই রয়েছে মরমী কবি হাসন রাজার বাড়ি। হাসন রাজা একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন। জমিদারির পাশাপাশি তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছিলেন। সে সকল গান এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাসন রাজার বাড়িটি যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই যাদুঘরে হাসন রাজার স্মৃতি বিজড়িত অনেক জিনিসপত্র আছে। এইখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন মরুমী কবি হাসন রাজার রঙ্গিন আলখাল্লা, তিনি যেই চেয়ারে বসে গান রচনা করতেন সেই চেয়ার। তার ব্যবহৃত তলোয়ার। আরো আছে চায়ের টেবিল, কাঠের খড়ম, দুধ দোহনের পাত্র, বিভিন্ন বাটি, পান্দানি, পিতলের কলস, মোমদানি, করতাল, ঢোল, মন্দিরা, হাতে লেখা গানের কপি, ও হাসন রাজার বৃদ্ধ বয়সের লাঠি। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফেরার পথে ঘুরে যেতে পারবেন হাসন রাজার যাদুঘর।
ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার অন্যতম রণাঙ্গন। এই রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে যারা শহীদ হন তাদের কয়েকজনকে এইখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে শহীদদের স্মরনে এইখানে স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়। এইখানে ৪৮ জন শহীদের সমাধি রয়েছে। সুউচু পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে আছে ১৯৭১ এর রক্তাত্ত সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন।
পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি
সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর ৩০০ বছর আগে তৈরি করা হয় পাইলগাও জমিদার বাড়ি। কালের পরিক্রমায় ক্ষয়ে যাওয়া জমিদার বাড়িটি আজও সৌন্দর্য, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক। এই জমিদার বাড়ির অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ০৯নং ইউনিয়নে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিটি ঘর যেন এক অন্যরকম নান্দনিক স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষী হয়ে আজো বিদ্যমান রয়েছে। পাইলগাও জমিদার বাড়ি প্রাচীন পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন।
হাওর ভ্রমণে থাকবেন কোথায়
একটা সময় টাঙ্গুয়ার হাওরে রাত্রী যাপন ছিল খুবই কষ্টদায়ক। ভালো কোন ওয়াশরুম ছিল না, প্রচন্ড গরমে ফ্যানের কোন ব্যাবস্থা ছিল না। মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়ার পর ছিলনা চার্জিং এর কোন ব্যবস্থা । আর রাতের বেলায় নারী পুরুষ গাদাগাদি করে সকলে মিলে একসাথে থাকা, কোন প্রাইভেসি ছিল না। গোসল করার পর নারীদের জন্য ছিল না কোন চেইঞ্জ রুম। তাই দেশের অনেক মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে হাওর ভ্রমণে আসতেন না। বর্তমানে হাওরে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বেশ কয়েকটি হাউজ বোট থাকায় এই সকল সমস্যা লাগব হয়েছে। বর্তমানে আমাদের প্রিমিয়াম হাউজ বোট “বাতান” হতে পারে আপনার হাওর ভ্রমণের সেরা পছন্দ। আমাদের হাউজ বোটে মোট ৬টি রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমের সাথে এটাচড ওয়াসরুম রয়েছে। প্রতিটি রুমে রয়েছে ফ্যান এবং আপনার প্রয়োজনীয় ডিভাইস সমূহ চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা। প্রতিটি রুমে ২-৩ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সার্বক্ষনিক জেনারেটরের ব্যবস্থা। রুম সার্ভিস, একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কো অর্ডিনেটর, এবং সাথে থাকবে হাওর ফটোগ্রাফি।
খাবার দাবার এর ব্যাবস্থা
সকালের নাস্তা তাহিরপুর বাজারে সেরে নিতে পারেন। দুপুর এবং রাতে খেতে পারেন ট্যাকের হাটে। এখানে বেশ কয়েকটি ছোটখাট রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। হাওরের নানান জাতের মাছ, হাঁস এবং বিভিন্ন প্রজাতির ভর্তা ভাজি পাওয়া যায় এই দোকান গুলোতে। যারা নৌকায় খেতে চান তারা তাহিরপুর বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সদাই এবং একজন বাবুর্চি নিয়ে নৌকায় উঠতে পারেন। আমাদের প্রিমিয়াম হাউজ বোট বাতান -এ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খাবার দাবার এর ব্যবস্থা থাকবে। তাই বাতান -এ বুকিং থাকলে খাবারের বিষয় নিয়ে একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে সঙ্গে যা যা রাখবেন
ব্যাগ, গামছা, ছাতা, মশার হাত থেকে বাঁচতে ওডোমস ক্রিম, টুথপেষ্ট, সাবান, শ্যম্পু, সেন্ডেল, ক্যামেরা, ব্যাটারী, চার্জার, সানক্যাপ, সানগ্লাস, সানব্লক, টিস্যু, ব্যক্তিগত ঔষধ, লোশন, চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক, ব্যাটারি ব্যাকআপ সহ টর্চ, কোভিড ১৯ মোকাবিলায় মাস্ক, এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখবেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য এবং সতর্কতা
- টাঙ্গুয়ার হাওর আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্বও আমাদের সকলের।
- টাঙ্গুয়ার হাওরে বেশকিছু জলাবন রয়েছে। এমন কিছু করবেন না যাতে এই বনের ক্ষতি হয়।
- বোটে উঠেই আপনার লাইফ জ্যাকেটটি বুঝে নিবেন। যদি বোটে লাইফ জ্যাকেট না থাকে তাহলে বাজারে ভাড়া পাওয়া যায়, সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিবেন।
- খরচ কমাতে চাইলে গ্রুপ ভিত্তিক ভ্রমণ করুন।
- বজ্রপাতের সময় বোটের ছাদে যাওয়া থেকে বিরিত থাকুন।
- যাদুকাটা নদীতে সাতার জানলেও কোনভাবেই লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না। জাদুকাটা নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত থাকে যা উপর থেকে বুঝা যায় না।
- হাওরের মাছ, বন্যপ্রানী এবং পাখি শিকার থেকে বিরত থাকুন।
- অতি উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে এমন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার থেকে থাকুন।
- হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং জীব বৈচিত্র রক্ষার জন্য কোন ধরনের অপচনশীল দ্রব্য হাওরের পানিতে ফেলবেন না। ( যদিও এই কাজটিই আমরা সব চাইতে বেশী করি। )
- টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমনে আসার আগে অবশ্যই আপনার পছন্দের হাউজ বোটটি বুকিং করে আসবেন।